“সৃষ্টিকর্তার সিদ্ধান্তই সবসময় সর্বোত্তম।”
আল্লাহতায়ালা যখন আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) কে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে প্রেরণ করলেন, তখন শুরু হলো মানব ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়।
এই কাহিনির মধ্য দিয়ে আমরা জানতে পারি পৃথিবীতে মানুষের জন্ম, জীবিকা, শিক্ষা, পরিবার গঠন, কোরবানি, এবং প্রথম হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে।
এটি শুধুই একটি গল্প নয়, বরং আমাদের জন্য এক অমূল্য শিক্ষা।
আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে আগমনের পর, আল্লাহতায়ালা তাঁদের কাছে ফেরেশতাদের পাঠাতেন নানা বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্য।
তাঁদের শেখানো হয়েছিল:
আল্লাহ তাঁদের জন্য গরু, ছাগল, ফলমূল ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রদান করেন, যেন তারা সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারেন।
আল্লাহর রহমতে, তাঁদের প্রথম যমজ সন্তান হলো—একজন ছেলে ও একজন মেয়ে।
পরের বছরই তাঁরা আরেকটি যমজ সন্তানের পিতা-মাতা হন।
এই সন্তানদের মাধ্যমেই পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর দুই ছেলের নাম ছিল:
এবং দুই মেয়ের নাম ছিল:
পৃথিবীতে তখন অন্য কেউ না থাকায়, আদম (আ.) আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে হাবিলের সঙ্গে আকলিমা এবং কাবিলের সঙ্গে লাবুদার বিয়ে দিতে চাইলেন।
কিন্তু কাবিল এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি।
সে নিজে আকলিমাকে বিয়ে করতে চায়।
আল্লাহ তখন কাবিল ও হাবিলকে কোরবানি দেওয়ার নির্দেশ দেন।
নির্ধারিত হয়—যার কোরবানি কবুল হবে, তিনিই আকলিমাকে বিয়ে করবেন।
হাবিল কোরবানি করলেন তাঁর সবচেয়ে সুন্দর একটি বকরি।
কাবিল কোরবানি দিলো এক বস্তা খারাপ মানের গম।
আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আগুন আকাশ থেকে এসে হাবিলের কোরবানির ওপর পড়ে তা গ্রহণ করে নেয়।
এতে বোঝা গেল—হাবিলের কোরবানি কবুল হয়েছে।
এই ঘটনার পর কাবিল ভীষণ রেগে গেল।
শয়তান তাকে প্ররোচিত করল হাবিলকে হত্যা করতে।
হাবিল বললো:
“তুমি যদি আমাকে হত্যা করতে চাও, তবুও আমি তোমাকে আঘাত করবো না।”
কিন্তু কাবিল শয়তানের প্ররোচনায় হাবিলকে হত্যা করে বসে।
এভাবেই পৃথিবীর প্রথম মৃত ব্যক্তি হাবিল, আর প্রথম হত্যাকারী হলো কাবিল।
হাবিলের মৃতদেহ পড়ে ছিল, কিন্তু কাবিল বুঝতেই পারছিল না হাবিল নড়ছে না কেন।
তখন কেউ জানতো না “মৃত্যু” কী বা একজন মৃত ব্যক্তিকে কীভাবে দাফন করতে হয়।
ঠিক সেই সময়, কাবিল দেখল এক কাক আরেক কাককে হত্যা করলো।
এরপর সেই কাক নখ ও ঠোঁট দিয়ে মাটি খুঁড়ে গর্ত করলো এবং মৃত কাকটিকে গর্তে রেখে মাটি চাপা দিয়ে দিলো।
এই দৃশ্য দেখে কাবিল শিক্ষা নেয় এবং হাবিলকেও মাটিতে দাফন করে।
এভাবেই পৃথিবীতে প্রথম কবর দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়।
আল্লাহ ঘোষণা করলেন:
“পৃথিবীতে এরপর যত অন্যায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবে, তার এক অংশের পাপ কাবিলকে বহন করতে হবে।”
এই কাহিনির মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, হিংসা, অহংকার ও আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা কী ভয়াবহ ফল বয়ে আনতে পারে। শয়তানের ধোঁকা, ভুল সিদ্ধান্ত ও ন্যায়ের বিপরীতে অবস্থান করার পরিণতি কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা এই ঘটনাই প্রমাণ করে।
এই সত্য ঘটনা কেবল ইতিহাস নয়, এটি একটি জীবন্ত শিক্ষা—যা আমাদের অহংকার ত্যাগ করতে এবং আল্লাহর আদেশ মেনে চলতে উৎসাহিত করে।