“শয়তান ভুল করে তর্ক করে, কিন্তু ভালো মানুষ ভুল করে ক্ষমা চায়।”
ইসলামে মানুষের ভুল করা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়াটাই হলো একজন ভালো বান্দার পরিচয়। এই নৈতিক শিক্ষার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) এর গল্প। চলুন কোরআনভিত্তিক এই সত্য কাহিনিটি বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
আদম (আ.) অনেকদিন ধরে জান্নাতে (বেহেশতে) একাকী অবস্থান করছিলেন। আল্লাহতায়ালা তাঁর একাকিত্ব অনুভব করে তাঁর জন্য একজন সঙ্গী সৃষ্টি করলেন, যিনি হলেন হাওয়া (আ.)।
হাওয়া (আ.) কে আদম (আ.) এর বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। এরপর তাঁরা দুজন মিলেমিশে বেহেশতে শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে লাগলেন।
আল্লাহতায়ালা আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) কে জান্নাতের সবকিছু উপভোগ করার অনুমতি দিলেন, শুধু একটি গাছ বাদে।
তিনি তাদের নির্দেশ দিলেন:
“এই গাছের ফল খাবে না এবং গাছের কাছেও যাবে না।”
সেই সঙ্গে তিনি তাঁদের জানিয়ে দিলেন যে,
“শয়তান তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু, সে তোমাদের ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করবে।”
অনেক বছর পর আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) আল্লাহর নিষেধ ও সতর্কতা ভুলে গেলেন। এই সুযোগে শয়তান তাঁদের ধোঁকা দিতে লাগলো।
শয়তান প্রতিদিন বলতে লাগল:
“আল্লাহ চান তোমাদের জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিতে, এইজন্য গাছের ফল খেতে নিষেধ করেছেন।”
“যারা এই গাছের ফল খায় তারা চিরকাল জান্নাতে থাকতে পারে।”
“আমি তোমাদের প্রতিজ্ঞা করে বলছি, আমি তোমাদের ভালো চাই।”
এই মিথ্যা কথাগুলোর ফাঁদে পড়ে অবশেষে তাঁরা গাছের ফল খেয়ে ফেললেন।
ফল খাওয়ার সাথে সাথেই:
আল্লাহ বললেন:
“তোমরা একই করেছো, আমি কি তোমাদের সতর্ক করিনি?”
আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) খুব লজ্জিত হলেন, চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন।
তাঁদের সত্যিকারের অনুশোচনায় আল্লাহতায়ালা তাঁদের উভয়কে ক্ষমা করে দিলেন।
কিন্তু আল্লাহ বললেন:
“তোমরা যেহেতু আমার আদেশ অমান্য করেছো, তোমাদের জান্নাত ছেড়ে পৃথিবীতে চলে যেতে হবে।”
“সেখানেই তোমরা বসবাস করবে, মৃত্যুবরণ করবে, এবং সেখান থেকেই পুনরায় জীবিত করা হবে।”
আল্লাহ তাঁদের পৃথিবীর দুটি ভিন্ন স্থানে নামিয়ে দেন।
অনেক বছর পর, তাঁরা সৌদি আরবের আরাফাতের ময়দানে একসাথে হন।
এভাবেই তাঁরা পৃথিবীতে নতুন জীবন শুরু করেন।
কী শেখা যায়?
এই গল্পটি আমাদের এক গভীর শিক্ষা দেয়—
আল্লাহ সবসময় ক্ষমাশীল।
তবে তাঁর আদেশ না মানলে পরিণাম অনিবার্য।
“ভুল হতেই পারে, কিন্তু সত্যিকার অনুতাপ ও ক্ষমাই ঈমানদারের পরিচয়।”