আদ জাতি ধ্বংসের পর আল্লাহ সামুদ জাতির কাছে নবী সালেহ (আঃ)-কে প্রেরণ করেছিলেন। সামুদ জাতি বর্তমান সৌদি আরবের একটি এলাকায় অবস্থান করতো। তারা পাহাড় খোদাই করে ঘরবাড়ি বানাতো এবং এই শিল্পে অত্যন্ত পারদর্শী ছিল। ক্রমে তারা সম্পদশালী হয়ে ওঠে, তবে তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ প্রবল হয়ে যায়।
সালেহ (আঃ) সবসময় সামুদ জাতিকে এক আল্লাহর ইবাদত করার জন্য আহ্বান জানাতেন। কিন্তু তারা পূর্বপুরুষদের মতো মূর্তি পূজাই চালিয়ে যেতে চেয়েছিল। তারা ভাবতো, তাদের পিতা-পিতামহ যা করেছেন সেটিই সঠিক। ফলে তারা সালেহ (আঃ)-এর কথা মানতে অস্বীকার করলো। বরং তারা তাঁকে উপহাস করে বললো, “তুমি কি বলতে চাও আমাদের পূর্বপুরুষেরা ভুল করেছে? আমরা মনে করি তুমি একজন পাগল। যদি সত্যিই নবী হও তবে একটি অলৌকিক ঘটনা দেখাও।”
তারা শর্ত দিলো, “আমাদের এই পাহাড়ের পাথর থেকে একটি লম্বা ও সুন্দর দশ মাসের গর্ভবতী মেয়ে উট বের করো। উট বের হওয়ার সাথে সাথে বাচ্চা জন্ম দিবে এবং আমরা তার দুধ পান করবো। যদি এটি ঘটে তবে আমরা তোমাকে নবী হিসেবে বিশ্বাস করবো।”
সালেহ (আঃ) বললেন, “তাহলে যদি এমন ঘটনা ঘটে তবে কি সত্যিই তোমরা আল্লাহতে ঈমান আনবে?” তারা উত্তর দিলো, “হ্যাঁ।” এরপর সালেহ (আঃ) আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করলেন এবং সতর্ক করলেন—যদি তারা এরপরও ঈমান না আনে তবে ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী।
হঠাৎ আল্লাহর আদেশে পাহাড় ফেটে একটি উটনী বের হলো। উটটি বের হওয়ার পরপরই বাচ্চা জন্ম দিল এবং প্রচুর পরিমাণে দুধ দিলো। পুরো এলাকার মানুষ সেই দুধ পান করলো। সালেহ (আঃ) বললেন, “এই উট আল্লাহর। তোমরা এর কোনো ক্ষতি করবে না। যদি ক্ষতি করো তবে আল্লাহ কঠিন আযাব পাঠাবেন।”
এই উট কূপ থেকে প্রচুর পানি পান করতো। তাই সালেহ (আঃ) ব্যবস্থা করলেন—একদিন কূপ থেকে মানুষ পানি নেবে, আরেকদিন উট পানি খাবে। উটের দুধ এত বেশি হতো যে তা দিয়ে পুরো এলাকার মানুষের পানির চাহিদা অনেকটা পূরণ হয়ে যেত।
কিছু মানুষ আল্লাহতে ঈমান আনলো, তবে অনেকেই অবিশ্বাস রয়ে গেলো।
অবশেষে কাফেররা উট হত্যার সিদ্ধান্ত নিলো। সালেহ (আঃ) শেষবারের মতো সতর্ক করলেন—“এটা আল্লাহর উট, এর কোনো ক্ষতি কোরো না।” কিন্তু কাফেররা শোনলো না। নয়জন কাফের নারী দ্বারা প্ররোচিত হয়ে উটকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।
একদিন যখন উটটি কূপ থেকে পানি খাচ্ছিল, তখন তারা উটের পায়ে তীর ছুঁড়লো। উট পালাতে চাইলে তারা তরবারি দিয়ে আঘাত করে মেরে ফেলে। এরপর তারা আনন্দে উল্লাস করতে থাকে।
সালেহ (আঃ) এই ঘটনায় প্রচণ্ড কষ্ট পেলেন। তিনি তাদেরকে সাবধান করলেন, তিনদিনের মধ্যে যদি তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা না চায় তবে আযাব আসবে। কিন্তু কাফেররা অহংকার করে বললো, তারা কোনো আযাবে ভয় পায় না। বরং তারা সালেহ (আঃ) ও তার পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করলো।
আল্লাহ সালেহ (আঃ)-কে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেন তাঁর অনুসারীদের নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। এরপর আল্লাহ সামুদ জাতির উপর ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প পাঠালেন। পাশাপাশি জিব্রাইল (আঃ)-কে এমন এক ভয়ংকর চিৎকারের নির্দেশ দিলেন যাতে তাদের কানের পর্দা ফেটে যায় এবং সবাই মারা যায়।
সামুদ জাতি ভেবেছিল তাদের মজবুত পাহাড়ি ঘরগুলোতে আশ্রয় নিলে রক্ষা পাবে। কিন্তু আল্লাহর গজব থেকে কেউই রক্ষা পায়নি। তাদের সব ঘরবাড়ি, সম্পদ একেবারে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। ঘটনাস্থল এতটাই ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল যে তা দেখলে কারও আত্মা কেঁপে উঠতো।
শিক্ষা: এই কাহিনি আমাদের শেখায়—আল্লাহর অবাধ্যতা করলে এবং তাঁর নিদর্শন অস্বীকার করলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হয়।